ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও তাদের দোসর হয়ে প্রশাসনে অনেকেই কাজ করছেন- এমন দাবি করেছে জুলাই ঐক্য। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা এ প্ল্যাটফরম এরই মধ্যে কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে ৪৪ সচিব এবং ৯৫ ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রশাসনের এসব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর দাবি জানিয়েছে জুলাই ঐক্য। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি জানান।

প্রধান উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন সচিবের কাছে এ তালিকা তুলে দেওয়া হবে বলেও জানায় জুলাই ঐক্য। এ বিষয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, সে অনুযায়ী পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানান তারা। সচিবদের মধ্যে রয়েছেন পানি সচিব নাজমুল হাসান, পরিবেশ সচিব ফারহানা আহমেদ, কৃষি সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ইব্রাহিমসহ ৪৪ জন। যাদের সবাই কর্মরত। জুলাই আন্দোলনে শহীদ মুনতাছির রহমান আরিফের বাবা গাজিউর রহমান তালিকা প্রকাশ করে বলেন, আমার ছেলে ফ্যাসিবাদীর বিলুপ্তি চেয়েছিল। চেয়েছিলাম একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, দেশ ভালো চলবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারকে যারা ইন্ধন দিয়েছে, তারা এখনো বহাল তবিয়তে। আমরা যে মামলা করেছি, তার একজন অপরাধীকেও ধরা হয়নি। না ধরলে বিচার কীভাবে হবে। উল্টো আমাদের হুমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, যারা হত্যা করেছে তারাই আবার এ ঘটনার তদন্ত করছে। তাহলে কীভাবে সত্য উদ্ঘাটন হবে? কীভাবেই বিচার হবে? আমরা জানি এখনো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা বহাল রয়েছেন। জুলাই ঐক্যের নেতা প্লাবন তারিক বলেন, আওয়ামী লীগের সময় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন এসব সচিবরা। আওয়ামী লীগ সরকার সুযোগ দিয়ে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছে। তিনি বলেন, একজন সচিব নাজমুল আহসান একসময় সাতক্ষীরার ডিসি ছিলেন, তার নির্দেশে অনেক মানুষের বাড়িঘর ভেঙেছেন। তিনি কট্টর আওয়ামী লীগের সমর্থক। তারা কিন্তু বহাল তবিয়তে আছেন। সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব মফিউর রহমান মুজিব শতবর্ষের সময় বই লেখেন। তিনি বানোয়াট গল্প লিখে তাবেদারি করেছেন। তার বিরুদ্ধে পদত্যাগের দাবি উঠলেও বর্তমান সরকার তা শোনেনি। এ ধরনের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে, সেসব কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপরে গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তালিকা প্রকাশ করে আবদুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদে সিস্টেম দাঁড় করাতে সব ক্ষেত্রের কর্মকর্তাদের দরকার হয়েছিল। তাদের তালিকা আমরা প্রকাশ করেছি। আমরা ঝুঁকি নিয়ে এ তালিকা প্রকাশ করছি। জুলাই আন্দোলনকে ব্যর্থ হতে দেব না। উজ্জ্বল কুমার হালদার, অমিত কুমার সাহা, শামসুজ্জামান কনক, জিসান, আফরিন জাহানসহ ৯৫ জনের নাম প্রকাশ করা হয়।’

এ সময় সরকারের কাছে কিছু দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো- ১. আগামী ৩১ মের মধ্যে তালিকায় থাকা আওয়ামী লীগের দোসরদের বাধ্যতামূলক অবসর দিতে হবে। ২. তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি দেশের জনগণকে দেখাতে হবে। ৩. দেশের তথ্য পাচারকারী, ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালানো, নির্দেশকারী এবং সহযোগিতাকারী সব আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিবারসহ সবার ব্যাংক হিসাব ও অবৈধ সম্পদ জব্দ করতে হবে। ৪. স্বৈরাচারের দোসর আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. আগামী ৩৬ জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত সব স্বৈরাচারের দোসরদের শ্বেতপত্র সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। ৬. আইনের ১৩২ ধারার কারণে থানায় খুনি পুলিশদের নামে মামলা নেওয়া হয় না। আগামী ৩১ মের মধ্যে এ ধারা বাতিল অথবা সংশোধন করতে হবে। ৭. আগামী ৩১ মের মধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তারা এখন কোথায় আছেন এবং কতজন কার সহযোগিতায় দেশ ছেড়েছেন তাদের তালিকাও প্রকাশ করতে হবে।

এর আগে গত ১০ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিকে সামনে রেখে গত ৬ মে ৩৫টি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফরমের সমন্বয়ে জুলাই ঐক্যের আত্মপ্রকাশ হয়। বর্তমান ৮০টি সংগঠন জুলাই ঐক্যের শক্তি। প্ল্যাটফরমটি আত্মপ্রকাশের পর থেকে আওয়ামী নিষিদ্ধের দাবিতে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করে জুলাই ঐক্য।

Share.

Comments are closed.